সদিচ্ছার প্রয়োগ চাই বিবেকের উত্থান চাই

আহমেদ শরীফ শুভcrossfire

যে দেশে নিজামী মুজাহিদীর মতো কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো গেছে সে দেশে মাদকের চুনোপুঁটিদের সেই কাঠগড়ায় দাঁড় করতে না পারার কারণ কি হতে পারে? তারা কি নিজামী মুজাহিদীর চেয়েও জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে শক্তিশালী? যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে প্রধানমন্ত্রী অসম সাহসিকতা দেখিয়েছেন। সৌদি রাজতন্ত্রের আকাংখা, হিলারীর অনুরোধ ও বান কি মুনের অনুনয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি অবিচল থেকেছেন। আইনের কথিত ‘ফাঁক গলে’ কিংবা ‘বিচার প্রকৃয়ার’ কথিত ‘দীর্ঘ সূত্রিতার’ কারণে একজন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীও পার পায়নি। তাদের প্রশিক্ষিত ক্যাডার বাহিনী ও আন্তর্জাতিক মুরুব্বি থাকা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দেয়ার মানুষের অভাব হয়নি। কারণ, সরকার ও প্রশাসনের শতভাগ সদিচ্ছা ছিল এই বিচারের। জনগণ সরকারের সাথে ছিল। তাহলে মাদকের চুনোপুঁটিদের বিচারের আওতায় আনা যাবে না কেন? যারা ‘আইনের ফাঁক, বিচারের দীর্ঘ সূত্রিতা, সাক্ষ্য প্রুমাণের অভাব’ এই সব অজুহাত তুলে ধরছেন তারা একবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা ভাবুন। তখনতো এর কোনটাই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। আজ  তা হলে সেই অজুহাতের প্রসঙ্গ আসছে কেন?

 

যারা “দু’ একটি ভুল” কে জাষ্টিফাই করতে চাচ্ছেন কিংবা “আগাছা নিড়ানোর সময় দু’ একটি ভালো গাছ উপড়ে যেতে পারে” বলে তৃপ্তি পাচ্ছেন নিজদের আত্মীয় স্বজন চেনা পরিচিত কেউ যদি সেই ‘দু একটি ভুল’ এর শিকার হোন বা ‘নিড়ানো আগাছার সাথের ভালো গাছে’ পরিনত হোন তখন তাদের স্বর পালটে যাবে নাতো?

 

নীতিনির্ধারকদের মধ্যে কি এমন একজনও নেই যিনি আন্তরিক ভাবেই মাদক নিয়ন্ত্রন করতে চান কিন্তু একই সাথে মাদক সেবনের মনস্তত্ত্ব এবং মাদকের সামাজিক অর্থনীতি বোঝেন?

 

সদিচ্ছার কারণেই নিজামী মুজাহিদীদের মতো শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছিল। তাদের বিচার না করে ‘ক্রসফায়ারে’ দিলে রাজাকার চিকন আলীদের বিচার সারা জীবনই প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যেত। মাদকের গড ফাদারদের আইনের আওতায় না এনে চুনোপুঁটিদের ‘ক্রসফায়ার’ও প্রশ্নবিদ্ধ না হয়ে উপায় নেই।

 

একমাত্র আন্তরিক সদিচ্ছাই মাদক নিয়ন্ত্রনের নিয়ামক হতে পারে। সদিচ্ছা ছাড়া এই সব ‘ক্রসফায়ার’ দিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রন অসম্ভব। শুধু তাই নয়,এই সব নাটক সরকারের সব অর্জনকে ধূলায় মিশিয়ে দিতে পারে। তাতে যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দোসরদের ক্ষমতায় আসার পথ সুগম হবে মাত্র।

 

একরাম হত্যার অডিও টেপ প্রমাণ করেছে,’ক্রসফায়ার’ শব্দটি মিথ্যা। মিথ্যা দিয়ে কখনো সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা যায় না।

 

সরকারের চারিদিকে খন্দকার মোশতাকের ষড়যন্ত্রের জাল। অজস্র মোশতাক উপদ্রুত এই অভাগা বাংলায় তাজউদ্দিনের কথা মনে পড়ে যায়।